“যে লোক মহান আলাহর কায়েম করা সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করবে, এটা তার নিজের জন্যই তার প্রভুর কাছে খুবই কল্যাণকর হবে।” (সুরা ঃ হাজ্জ ঃ আয়াত ঃ ৩০)
“যে লোক মহান আলাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি সম্মান করবে, আর এটা সম্মান প্রদর্শন দিলের তাকওয়ার ফল।” (সূরা ঃ হাজ্জ ঃ আয়াত ঃ ৩২)
“মু’মিনদের প্রতি তোমার বিনয় ও নম্রতার ডানা সম্প্রসারিত কর।” (সূরা ঃ হিজর ঃ আয়াত ঃ ৮৮)
“যদি কেহ অন্য কোন লোককে হত্যার পরিবর্তে অথবা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করার অপরাধ ব্যতীত কাউকে হত্যা করে, তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল। আর যদি কোন লোক কাউকে জীবন দান করে অন্যায়ভাবে নিহত হওয়ার হাত হতে রক্ষা করে তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে জীবন দান করল। (সূরা ঃ মায়িদা ঃ আয়াত ঃ ৩২)
১. হযরত আবূ মুসা আশ আরী রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, এক মুমিন অন্য মু’মিনের জন্য প্রাচীর স্বরূপ এর এক অংশ অন্য অংশকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করে। এ কথা বলার সময় তিনি এক হাতের আঙ্গুল অন্য আঙ্গুলের ফাকে ঢুকিয়ে দেখালেন। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
২. হযরত আবূ মুসা আশ আরী রাদিয়ালাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম যখন কোন লোক মসজিদ অথবা বাজার সমূহ হতে কোন জিনিষ নিয়ে যায় এবং তার সঙ্গে যদি তীর থাকে, তবে সে সেন তার অগ্রভাগ সাবধানে রাখে অথবা হাতের মুঠোর মধ্যে রাখে। এর ফলে কোন মুসলমানের আঘাত লাগার আশংকা থাকবে না। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৩. হযরত নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন, পারস্পরিক ভালবাসা, দয়া-অনুগ্রহ ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ হতে সকল মু’মিন মুসলমান একটি দেহের সমতুল্য যদি দেহের কোন অংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও তা অনুভব করে। সেটা জাগ্রত অবস্থায়ই হোক কিংবা জ্বরের অবস্থায় হোক। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৪. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একবার রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম হাসান ইবন আলীকে চুমু দিলেন। এ সময় আকরা ইবন হাবিস রাদিয়ালাহু আনহু তার কাছে উপস্থিত ছিলেন। আকরা রাদিয়ালাহু আনহু বললেন, আমার দশটি ছেলে আছে। কিন্তু আমি কখনও তাদের কাউকে চুমু দেইনি। রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে লোক দয়া প্রদর্শন করে না সে দয়ার পাত্র হতে পারে না। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৫. হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়ালাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- কিছুসংখ্যক আরব বেদুঈন রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর কাছে এল। তারা জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি আপনাদের ছোট শিশুদের চুমু খান? রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন, হ্যাঁ। অন্য লোকজন বলল, মহান আলাহর কসম! আমরা কিন্তু চুমু দিই না। রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন, আমি কি এর মালিক বা জিম্মাদার হতে পারি, যদি মহান আলাহ তোমাদের অন্তর হতে রহমত ও অনুগ্রহকে তুলে নিয়ে নেন। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৬. হযরত জারীর ইবনে আবদুলাহ রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেন, যে লোক মানুষকে দয়া করে না, মহান আলাহ তাকে দয়া করেন না। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৭. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে কেহ যখন নামাযের লোকদের ইমামতি করে সে যেন নামায সংক্ষেপ করে, কেননা তাদের মধ্যে দুর্বল, রুগ্ন ও বৃদ্ধ লোক থাকতে পারে। যখন তোমাদের কেউ একাকী নামায পড়ে, তখন সে ইচ্ছামত নামায দীর্ঘায়িত করতে পারে। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৮. হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়ালাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর কোন কাজ করার ঐকান্তিক আগ্রহ থাকা সত্তে¡ও তা পরিত্যাগ করতেন এই ভয়ে যে, লোকজন তার দেখাদেখি তা নিয়মিত করতে থাকবে, ফলে এটা তাদের ওপর ফরয করে দেয়া হবে।(বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৯. হযরত আনাস রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, তোমাদের কেউই ঈমানদার হতে পারে না, যত সময় না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১০. হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়ালাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম সাহাবা কেরাম রাদিয়ালাহু আনহু এর প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সাওমে বিসাল অর্থাৎ বিরতিহীনভাবে রোযা পালন করতে নিষেধ করেছেন। তার আবেদন আমি তোমাদের মত নই। আমি রাত্রি যাপন করি আর আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১১. হযরত জুনদুব ইবনে আবদুলাহ রাদিয়ালাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, যে লোক সকালে ফযরের নামায পড়ল। সে মহান আলাহর জিম্মায় চলে গেল। মহান আলাহ যেন তোমাদের নিকট হতে তার যিম্মার ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব চান। পাকড়াও করতে চাইবেন পাকড়াও করতে পারবেন, তারপর তাকে উপুড় করে দোযখে নিক্ষেপ করবেন। (মুসলিম শরীফ)
১২. হযরত ইবনে উমার রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন, একজন মুসলমান অপর একজন মুসলমানের ভাই। সে না তার উপর জুলুম করতে পারে আর না তাকে শত্র“র হাতে সোপর্দ করতে পারে। যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়। মহান আলাহ তা’আল তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে লোক কোন মুসলমানের কোন কষ্ট বা অসুবিধা দূর করে দিবেন। যে লোক কোন মুসলমানের দোষ গোপন রাখে মহান আলাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১৩. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে না তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। না তাকে মিথ্যা বলতে পারে, আর না তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। বস্তুত প্রত্যেক মুসলমানের মান-ইজ্জত ধন-সম্পদ ও রক্ত অন্য সব মুসলমানের উপর হারাম। তিনি বক্ষের দিকে ইশারা করে বললেন, তাকওয়া এখানে আছে। কোন লোকের খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করে, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে। (তিরমিযী শরীফ)
১৪. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসাপোষণ করোনা, নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতাকে ধোকা দিওনা। ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হতে মুখ ফিরিয়ে নিও না। একজনের ক্রয় বিক্রয়ের ওপর অন্যজন ক্রয়-বিক্রয় করো না। মহান আলাহ তা’আলার বান্দাগণ, অন্য মুসলমানের ভাই। সে তাকে জুলুম করতে, অপমান অপদস্থও করতে পারে না। তাকওয়া এখানেই আছে। এ কথাটা তিন তিনবার বলেন এবং নিজের বক্ষের দিকে ইশারা করেন। কোন লোক খারাপ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করে, হীন মনে করে। বস্তুত প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, ধন সম্পদ এং মান-সম্মান অন্য সব মুসলমানের জন্য হারাম। (মুসলিম শরীফ)
১৫. হযরত আনাস রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেন, তোমার ভাইকে সাহায্য কর, চাই সে জালিম হোক অথবা মজলুম, এক লোক বলল, ইয়া রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম যে যদি মজলুম হয়, আমি তাকে সাহায্য করব এটা বুঝতে আপনার কি অভিমত, যদি সে জালিম অত্যাচারী হয় তবে আমি তাকে কি করে সাহায্য করতে পারি? তিনি বললেন, তাকে জুলুম করা হতে বিরত রাখ, বাধা দাও, এটাই তাকে সাহায্য করা। (বোখারী শরীফ)
১৬. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে, সালামের জবাব দেয়া, রুগ্নের পরিচর্যা করা, জানাযায় অনুসরণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জবাব দেয়া। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১৭. হযরত বারা’আ আযিব রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম আমাদেরকে ৭ বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ৭টি বিষয় হতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। রোগীর খোজ খবর নিতে, জানাযায় অনুসরণ করতে হাঁচির জবাব দিতে, শপথ বা প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে, মযলুমের সাহায্য করতে, দাওয়াতকারীর দাওয়াত কবুল করতে এবং সালামের বহুল প্রচলন করতে। তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন, স্বর্ণের আংটি পরিধান করতে ও তৈরী করতে, রূপার পাত্রে পান করতে, লাল রং-এর রেশমের গদিতে বসতে, কাচ্ছি কাপড় রেশমী বস্ত্র এবং দীবাজ মিহি রেশমী পরিধান করতে। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
Leave a Reply